সদ্য একটা ট্রফির মরশুম শেষ হলো মোহনবাগানের। ফুটবলে আইএসএল কাপ, শিল্ড, RFDL ট্রফি; হকিতে কলকাতা হকি লীগ; ক্রিকেটে অ-১৩ অম্বর রায় ট্রফি, সিনিয়র দলের জে.সি. মুখার্জি টি-২০ ট্রফি জয়; মোহনবাগানের মরশুম গেছে মোহনবাগানের মতোই।
কিন্তু, এ কথা কারুর স্বীকার করতে দ্বিধা থাকবেনা, কলকাতার দুই প্রধান বাকি খেলাধূলায় যতোটাই সফল হোক না কেনো, দিনের শেষে দুই প্রধানের সমর্থকদের কাছে আবেগের জায়গা ফুটবল। মোহনবাগান ফুটবলে জিতলে বাংলা হাসে, মোহনবাগান ফুটবলে ফাইনাল হারলে বাংলা এক রাত অভুক্ত থাকে।
তবে, হকির অদ্ভুত নিয়মের যাঁতাকলে পরেই একরকম ভাবে হঠাৎই সমস্যায় জর্জরিত মোহনবাগান। আরপিএসজি গোষ্ঠী মোহনবাগান ফুটবল দলের দায়িত্বে আসার পর তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিলো মোহনবাগান মাঠের পরিকাঠামোর উন্নতিসাধন, যাতে মোহনবাগান নিজের মাঠেই সমস্ত যুদ্ধ জয়ের প্রস্তুতি নিতে পারে। একারনেই গত মরশুম শুরুর আগে ঢেলে সাজানো হয়েছিলো মোহনবাগানের ট্রেনিং ফেসিলিটি। প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা খরচ করে মোহনবাগান এমন একটা মাঠ তৈরি করেছিলো যা প্রথম দেখাতেই পছন্দ করে ফেলেছিলেন স্প্যানিশ ট্যাকটিশিয়ান হোসে মোলিনা এবং তার সতীর্থ ইগর তাসেভস্কি! প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই দুই বর্ষীয়ান স্প্যানিশ কোচ অনেক কাছে থেকে দেখেছেন লা লীগা খেলা তাবড় তাবড় ক্লাবের ট্রেনিং গ্রাউন্ড, এবং, তাদের এই মাঠের চেহারা দেখে দুবার ভাবতে হয়নি।
২৯শে জুলাই, ২০২৪: প্রথম প্র্যাকটিস সেশন
অজি বিশ্বকাপার ত্রয়ী দিমি পেত্রাতোস, জেসন কামিংস, জেমি ম্যাকলারেন'রাও পুরো বিশ্বে ঘুরে এসেছেন, এবং মোহনবাগান মাঠের প্রশংসায় সবাই পঞ্চমুখ। এহেন মোহনবাগান মাঠ হঠাৎ করেই মোহনবাগানের হাতছাড়া হয়ে যায় মাঝ মরশুমে। সূত্র মারফত খবর, হকি ফেডারেশনের অনুরোধে নিয়মের বেড়াজালে হকি লীগ অনুষ্ঠিত করার জন্য নিয়ে নেওয়া হয় মোহনবাগান মাঠ। যে মাঠে আইএসএল ফাইনালে নামার আগে শেষ প্র্যাকটিস সেশনে সমর্থকদের থেকে জয়ধ্বনি পেতে পারতেন শুভাশীষ বোস, বিশাল কাইথ'রা, সেই মাঠকেই হঠাৎ করে 'আন অ্যাভেলেবল' করে দেওমা হয়। হাওড়ার ডুমুরজলা'য় তৈরি হওয়া অ্যাস্ট্রোটার্ফে খেলা হয় পুরো প্রথম ডিভিশন টুর্নামেন্ট! তবে দ্বিতীয় ডিভিশনের খেলা দেওয়া হয় মোহনবাগান মাঠে, যার কারণে লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে নির্মিত মোহনবাগান মাঠের অবস্থা এখন তথৈবচ।
আচ্ছা কখনোও শুনেছেন রিয়াল মাদ্রিদের বাস্কেটবল দলের ম্যাচ থাকার দরুন সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ফুটবল ম্যাচ খেলতে পারছে না রিয়াল মাদ্রিদ? বা, ফুটবল ডার্বির জন্য হঠাৎ বাতিল হয়ে গেছে ইডেন গার্ডেন্সে কোনো ক্রিকেট ম্যাচ? কিন্তু মোহনবাগান দলকে মরশুমের পর মরশুম সমস্যায় জর্জরিত হতে হয় কিছু প্রাগেতিহাসিক যুগের নিয়মের জন্য!
ফুটবল মাঠে ফুটবল না খেলতে পেরে সল্টলেকে আলাদা করে ট্রেনিং ফেসিলিটি ভাড়া নিতে হয়েছে মোহনবাগান দলকে। যা নিয়ে যারপরনাই ক্ষুব্ধ মোহনবাগান ফুটবল ম্যানেজমেন্ট। গতবারের কলকাতা ফুটবল লীগে সাফল্য না আসায় ঢেলে সাজানো হয়েছে মোহনবাগান রিজার্ভ দলকে। এমবিএফটি'র পাওয়া খবর অনুযায়ী বেশ কিছু উদীয়মান বাঙালি তারকাকে দলে নিতে উদ্যোগ দেখাচ্ছে মোহনবাগান। কোচ দেগী কার্দোজো কে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে দলটিকে কলকাতা লীগ জেতার মতো জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। যে কারণে হয়তো জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই অনুশীলনে নামার ভাবনাচিন্তা করবে মোহনবাগান থিঙ্কট্যাঙ্ক!
কিন্তু, বিধি বাম; বেশ কয়েকদিন আগে ফুটবলের জন্য মাঠ তৈরি শুরু করতে পেরেছে মোহনবাগান। কথা বলে জানা গেলো, গতবারের মতো বিশ্বমানের মাঠ তৈরিতে ৬-৮ সপ্তাহের সময় প্রয়োজন। আজ প্রকাশিত এই সময়ের 'মোহনবাগানের কুর্সির কিসসায় ব্রাত্য ফুটবল' শীর্ষক আর্টিকেলে বলা হয়েছে মোহনবাগান সিএফএলের জন্যও হয়তো মাঠ ভাড়া নেবে, কারণ ময়দানের মাঠ তখনও তৈরি হয়েই উঠবে না।
প্রয়াত মোহনবাগান সচিব অঞ্জন মিত্র বলেছিলেন মোহনবাগান মাঠে শুধু ফুটবল হবে। বর্তমানে ভোটের আবহের যুযুধান দুই গোষ্ঠী কি পারেন না রাজ্য সরকারের সাথে কথা বলে সমস্যার সমাধান করতে? উত্তরটা সময়ের হাতে ছেড়ে দেওয়া বাদে সাধারন সমর্থকদের কাছে হয়তো আর কোনো উপায়ই নেই।