বিশ্বের বৃহত্তম হ্যান্ড-পেইন্টেড টিফো: মোহনবাগানের দখলে বিশ্বরেকর্ড |
পছন্দের ফুটবল ক্লাবের একটা জয় সারাদিনের ক্লান্তি ভুলিয়ে দিতে পারে সমর্থকদের আবার ৩ পয়েন্ট না এলে সারাদিনের ছোটখাটো হতাশা/ ব্যর্থতাগুলোও প্রিয় দলের জয় না পাওয়ার হতাশার সাথে মিশে গিয়ে এক নিদারুণ মনোকষ্টের জন্ম দেয়।
When the entire stadium started singing! Goosebumps, literal goosebumps.. ✨#MBSG #JoyMohunBagan #আমরাসবুজমেরুন pic.twitter.com/YK4Wn5cj6r
— Mohun Bagan Super Giant (@mohunbagansg) February 25, 2025
ফুটবল মানচিত্রের নিরিখে ভারতবর্ষ বেশ খানিকটা পেছনে থাকলেও ভারতের বেশকিছু রাজ্যের সমর্থককুলের ফুটবল-উন্মাদনা সারা বিশ্বে আলোচিত। আর ভারতে ফুটবলের প্রতি সবথেকে বেশি উন্মাদনা যদি কোথাও দেখতে হয় তাহলে সবার আগে আসবে ভারতীয় ফুটবলের মক্কা কলকাতা। কলকাতার শতাব্দী প্রাচীন মোহনবাগান ক্লাব, সমর্থকদের কাছে কেবল একটি ক্লাব নয়, তার থেকে আরো অনেক অনেক বেশি কিছু।
সেজন্যই যখন ক্লাবের আর্থিক সংকট আসে, তখন কোনো এক সমর্থক হাজির হন নিজের বাড়ির দলিল নিয়ে, পুরো সম্পত্তিটাই ক্লাবকে দান করার উদ্দেশ্যে, আবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবের কাছে ৫-০ গোলে শোচনীয় পরাজয়ের শোক সহ্য করতে না পেরে মোহনবাগান সমর্থক উমাকান্ত পালোধী আত্মহননের পথ বেছে নেওয়ার আগে শপথ নেন পরজন্মে মোহনবাগান ফুটবলার হয়ে বড়ম্যাচে বদলা নেওয়ার।
কোনো সমর্থক তার অতি প্রিয়জনকে শেষবিদায় জানিয়ে সাময়িকভাবে শোক-দুঃখ ভুলতে মাঠে আসেন ক্লাবের জয় দেখতে, আবার শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে দূরে সরিয়েও অনেকেই মাঠে আসেন সবুজ-মেরুন জার্সি পরে মাঠে নামা ছেলেগুলোর মনের জোর বাড়িয়ে দিতে। চির-প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে একজন শিশু সমর্থক যেমন “ইসকা নাম হ্যায় মোহনবাগান” বলে মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে খেলোয়াড়দের অনুপ্রেরণা জোগাতে পারে, ঠিক তেমনি ভেন্টিলেশনে শুয়ে থাকা বৃদ্ধ সমর্থকের মোবাইলে প্রিয় দলের গোল দেখে তৃপ্তির নিঃশ্বাস খেলোয়াড়দের সাথে সাথে সমর্থকদের মনোবলও বাড়িয়ে দেয় হাজারগুণ।
মোহনবাগান সমর্থকদের ক্লাবের প্রতি এহেন ভালোবাসার উদাহরণ ভুরিভুরি। সম্প্রতি মোহনবাগানের আল্ট্রাস গ্রুপ মেরিনার্স বেস ক্যাম্পের সদস্যরা ক্লাবের প্রতি ভালোবাসার ও প্যাশনের এক অসামান্য নিদর্শন সৃষ্টি করেছেন। তারা গত সাতাশে জানুয়ারী ২০২৫ তারিখে সল্টলেক বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মোহনবাগান বনাম বেঙ্গালুরু এফসি ম্যাচে একটি বিশাল টিফো নিয়ে আসেন যার আয়তন ছিল ২৫,৫০০ বর্গফুট।
UNFURLING THE WORLD'S LARGEST HAND PAINTED TIFO 🟢🔴
— Mariners' Base Camp - Ultras Mohun Bagan (@MbcOfficial) January 28, 2025
.
.#JoyMohunBagan 💚❤️#MohunBagan #MarinersBaseCamp #ultrasmohunbagan #ultrastifo #TheArtReturns #worldslargesthandpaintedtifo #ISL 🏆#MBSGBFC ⚽ pic.twitter.com/82XjpZmNEh
মোহনবাগানের ফ্যান্স ক্লাব মেরিনার্স এরিনা ক্লাবের সঙ্গে বিদেশী ফুটবলারদের একাত্মতা তুলে ধরেছিলেন এই টিফোতে। আর হাতে আঁকা টিফো ধরলে ভারতীয় রেকর্ডটি ছিল নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসির। এবার মেরিনার্স বেস ক্যাম্প হ্যান্ড-পেইন্টেড টিফোতে করে ফেলল বিশ্বরেকর্ড। যুবভারতীর গ্যালারিতে আরো একবার রচিত হল ইতিহাস।
সুবিশাল এই টিফো তৈরীর পেছনে রয়েছে অসংখ্য মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম, সদিচ্ছা, এবং ক্লাবের প্রতি ভালোবাসা। ২০১৫ সাল থেকে মেরিনার্স বেসক্যাম্প হাতে আঁকা টিফো নিয়ে আসছে মোহনবাগান গ্যালারিতে। আই এস এল জমানায় হাতে আঁকা টিফো তারা না করলেও এর আগের পাঁচ বছরে তাদের হ্যান্ড-পেইন্টেড টিফো একটা আলাদা জায়গা তৈরী করে নিয়েছিল মোহনবাগানীদের মননে। এই টিফোটি তৈরীর কাজ শুরু হয় মোহনবাগানের দূর্গ বলে পরিচিত হাওড়া জেলার আন্দুলে।
Legacy isn’t made alone. 🟢🔴
— Mariners' Base Camp - Ultras Mohun Bagan (@MbcOfficial) January 23, 2025
Big shout-out to our MBC girls for taking this tifo to the next level. 💪🏻💚❤️#JoyMohunBagan #MarinersBaseCamp #UltrasMohunBagan #UltrasLife #UltrasMentality #TheArtReturns #WorldsLargestHandPaintedTifo pic.twitter.com/poN0Vc3SJ9
তিন সপ্তাহ ব্যাপী দিন রাত এক করে কাজ করেছেন মেরিনার্স বেস ক্যাম্প এবং তাদের বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েট ফ্যান্স ক্লাব এবং আর্ট কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা। একটানা এই কাজ চলার সময় আন্দুলের বাইরে থেকে আসা অনেকেই আন্দুলকে নিজেদের "সেকেন্ড হোম" করে নিয়েছিলো। সুবিশাল এই মহাযজ্ঞে শামিল হতে বেশ কিছু মোহনবাগান সমর্থক স্বেচ্ছাশ্রম দান করতে ভারতের অন্য প্রান্ত থেকেও এসে হাজির হন। তাঁবু খাটানো, রাতে পাহাড়ার ব্যবস্থা করা, ছেলেদের থাকা খাওয়ার বন্দোবস্ত, বিদ্যুতের জোগান, কাপড়, রঙের খরচ– এই বিশালাকৃতি টিফোটি তৈরী করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৭.৫ লক্ষ টাকা।
প্রায় পঞ্চাশ জন ছেলে মেয়ে হাতে এঁকে ফুটিয়ে তুলেছেন ভারতের জাতীয় ক্লাব মোহনবাগানের গৌরবগাথা। ১৯১১ সালে ফুটবলমাঠে খালি পায়ে খেলে ব্রিটিশ দল হারানোর মাধ্যমে আইএফএ শিল্ড জয়ের ইতিহাসকে চিত্রিত করা হয়েছে দৈত্যাকার এই টিফোতে। টিফোতে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং খালি পায়ে খেলা সেই বীর ফুটবলারদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে, যারা এই জয়ের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদের স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়েছিলেন।
টিফোতে দেখা যাচ্ছে প্রথমে ব্রিটিশদের হাতে ভারতীয়দের লাঞ্ছনা হওয়ার দৃশ্য, এরপর মোহনবাগান দলের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার দৃশ্য এবং শেষে তাদের হারিয়ে উঠে শিল্ড নিয়ে মোহনবাগানের অমর একাদশের চিত্র, যাদের পেছনে নেমে যাচ্ছে ইউনিয়ন জ্যাক এবং ওপরে উঠছে ভারতের তেরঙ্গা। গ্যালারিতে তাঁরা হাতে লেখা সুবিশাল ব্যানারও রাখেন, যেখানে লেখা: "OUR LEGACY ISN'T JUST HISTORY BUT THE HEART BEAT OF A NATION OF PATRIOTS."
মোহনবাগান সমর্থকদের এই উদ্যোগ শুধু তাদের ক্লাবের প্রতি ভালোবাসা নয়, বরং ভারতীয় ফুটবলে টিফো সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও একটি মাইলফলক হয়ে থেকে যাবে। তাদের এই প্রচেষ্টা বিশ্বব্যাপী ফুটবল সমর্থকদের জন্য একটি প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।
এই প্রচেষ্টা ভারতীয় ফুটবলে টিফো সংস্কৃতির বিকাশে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে একথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। একটা আস্ত সময়ের ইতিহাসকে যেন গল্পের আকারে চোখের সামনে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যেখানে ব্রিটিশের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে উড়ে যায় সবুজ মেরুন ঘুড়ি, হাতছানি দেয় স্বাধীনতা।
কলমে সাত্যকি আদিত্য মিত্র এবং সাগ্নিক চক্রবর্ত্তী।
Follow MBFT on Twitter, Facebook, Instagram, Youtube, Telegram, Whatsapp & Google News to stay updated with all the Mohun Bagan & Indian Football related News & Updates. Jai Hind Jai Bharat! Joy Mohun Bagan!