মোহনবাগানের সুব্রত ভট্টাচার্য্য
তিয়াত্তরের শুরুর দিক। শ্যামনগরে এক আত্মীয়ের বিয়েতে এসেছেন অশোকলাল ব্যানার্জি। ইস্টবেঙ্গলের নামী ফুটবলার, জুনিয়র ইন্ডিয়াও খেলেছেন। তাঁকে ঘিরেই সকলের ভিড়। কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে, মাঝবয়সী এক ভদ্রমহিলা স্বগতোক্তি করলেন, "খেললে এইরকম খেলা উচিত।" তারপর ঘুরে নিজের ফুটবলার ছেলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, "পারবি না তো ওর মত খেলতে?"
কাট টু উনিশে মার্চ, উনিশশো একানব্বই, ইস্টবেঙ্গল মাঠে শেষ হলো এয়ারলাইন্স কাপ ফাইনালের খেলা।মোহনবাগান জিতল ২-০ গোলে, তবুও গ্যালারি কাঁদছে। এ কান্না জয়ের নয়, এ কান্না বিচ্ছেদের, বেদনার। এক টানা সতেরো বছর পাঁচ মাস সবুজমেরুণ জার্সিতে ঘাম-রক্ত ঝরিয়ে, আজ শেষ ম্যাচে গোল করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়ছে সেই তিয়াত্তরে শ্যামনগরের বিয়েবাড়িতে মায়ের প্রশ্নে তেতে ওঠা বাবলু নামের ওই রোগা,লম্বা ছেলেটা। শ্যামনগরের বাবলু থেকে ময়দানের সুব্রত ভট্টাচার্য্য (বাবলুদা) হয়ে ওঠার পথটা যে মসৃণ ছিল না, সেটা বলাই বাহুল্য।
তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে :
ম্যাচের প্রায় শেষ লগ্ন। গোলশূন্য খেলা চলছে। সবাই ধরে নিয়েছে মোহনবাগানকে পয়েন্ট খোয়াতে হবে। কিন্তু হঠাৎ, বিপক্ষের বক্সের ভেতর ক্রস ভাসালেন বিদেশ বসু, মোহনবাগান স্ট্রাইকারদের সাথে বিপক্ষের ডিফেন্ডাররাও লাফিয়ে উঠেছে বল ক্লিয়ার করার লক্ষ্যে। কিন্তু তখনই, ঠিক চিতার ক্ষিপ্রতায় লাফিয়ে উঠে জিরাফের মত ঘাড় উঁচিয়ে বলে মাথা ছুঁইয়ে হেড করলেন ডিফেন্স থেকে গোলের প্রত্যাশায় উপরে উঠে আসা সুব্রত ভট্টাচার্য্য। পরমুহূর্তেই গোটা মোহনবাগান গ্রাউন্ড গর্জে উঠল ' গোওওওওল'। মোহনজনতার গর্জন পৌঁছে গেল বাবুঘাট অবধি। মিনিট কয়েক বাদে খেলা শেষের বাঁশি বাজতেই, মোহনবাগান মাঠ আবার বিজয়োল্লাসে মুখরিত হল। পথচারী জনতাও থমকে গেল, জয়ের নায়ককে সম্মান জানাতে। সত্তর-আশির দশকে এটা ছিল ময়দানের চেনা দৃশ্য। এমনকি, নিজের শেষ কলকাতা লীগে, বহু সময়ই পরিবর্তিত স্ট্রাইকার হিসেবে সুব্রত ভট্টাচার্য্যকে নামিয়ে দিয়েছেন কোচ পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বছর লীগে এগারোটা গোল করেছিলেন ময়দানের বাবলু।
এ তো গেল বিপত্তারণ স্কোরার বাবলু। অথচ ময়দানের সেরা ডিফেন্ডারদের তালিকায় যে বাবলু ভটচাজের নাম উপরের দিকে থাকে, তার ডিফেন্সিভ কোয়ালিটি নিয়ে কথা হবে না, তাই হয়! তাঁর খেলা দেখার সৌভাগ্য হয়নি। অগ্রজ মোহনবাগান সমর্থকদের কাছ থেকে শুনেছি, সুব্রত ভট্টাচার্য্য কেমন খেলতেন। হাজারের উপর ম্যাচে মোহনবাগান দুর্গ সামলেছেন অভিজ্ঞ-অনভিজ্ঞ সহকারীদের নিয়ে। গড়পড়তা ডিফেন্ডারের চাইতে ওনার খেলার ধরণটা ছিল একটু অন্যরকম। পাওয়ারের চাইতে বুদ্ধি এবং স্কিল দিয়েই খেলতে ভালোবাসতেন সুব্রত ভট্টাচার্য্য। প্রদীপ চৌধুরী অর্থাৎ ময়দানের জ্যেঠুর সাথেই বোধহয় সবচেয়ে বেশি জুটি বেঁধেছেন পিকের বাবলুবাবু। জ্যেঠু খেলতেন পাওয়ার দিয়ে, তাই ফার্স্ট ট্যাকল করতে উপরে যেতেন। নীচে লুজ বলটা ধরে কাউন্টার অ্যাটাক শুরু করার কাজটা করতেন সুব্রত ভট্টাচার্য্য। এই পেছনে খেলার ঝুঁকিটা সবাই নিতে পারে না। কারণ, কিপারের আগে সেই ডিফেন্সের শেষ স্তম্ভ। সামান্য ভুলের কারণে গোটা দলকে মাসুল দিতে হতে পারে। কিংবদন্তি ফুটবলার, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য্য, সুব্রত ভট্টাচার্য্য সম্বন্ধে বলতে গিয়ে বলছিলেন, পেছনে যারা খেলেন, তাদের লিডারশিপ কোয়ালিটি থাকতেই হয়, সঙ্গে রাখতে হয় তীক্ষ্ণ ফুটবল বোধ। বিপক্ষের আক্রমণ শুরু হওয়ার পর সেটার গতিপ্রকৃতি বুঝে প্রয়োজনীয় ট্যাকল বা ক্লিয়ার করার মাঝে সেকেন্ডের ভগ্নাংশের বেশি সময় পাওয়া যায় না। সেখানে ভুল হলেই গোল হবার সুযোগ এসে যায়। আর দর্শকের কাছে সেই পেছনের ডিফেন্ডার হয়ে ওঠেন ভিলেন। পেছনে খেলার এই দুরূহ কাজটাই মোহনবাগানে সতেরো বছর ধরে করে গেছেন বাবলুদা। শুধু তাই নয়, মোহনবাগানের বিপদের দিনে বহুবার ওখান থেকে অ্যাটাক শুরু করে উপরে উঠে গোলও করে এসেছেন। রীতিমত ভালো ফুটবল সেন্স না থাকলে সেটা সম্ভব হয় না। এত বছর ধরে একটানা খেলে যেতে গেলে যে টেকনিক্যাল কোয়ালিটি, কভারিং, সেন্স বা অ্যাডভান্স থিংকিং প্রয়োজন, সেটা ছিল সুব্রত ভট্টাচার্য্যের।
কিংবদন্তি কোচ পিকে ব্যানার্জি আত্মজীবনী 'গুরু'তে লিখেছেন, "সুব্রতর ছিল তীব্র ইগো। বিএনআরে গড়পড়তা ডিফেন্ডার থেকে বড় টিমে প্রচুর পরিশ্রম করে বিরাট মাপের স্টপার হয়ে উঠেছিল। সত্যি বলতে কি, মোহনবাগানে একটা সময় তো বাবলু প্রায় অরুণ ঘোষের স্ট্যান্ডার্ডে খেলেছে স্টপার পজিশনে!"
হিরো বাবলু, ভিলেন বাবলু :
শুধু তাই নয়, অনেক সময়েই বিপক্ষের ফুটবলারদের ড্রিবল করে বেরিয়ে যাওয়ার প্রবণতাও ছিল বাবলুবাবুর। তাতে বেশ কয়েকবার সফল হলেও, ভুলও হয়েছে, সেখান থেকে গোল হয়ে গেলে ময়দানের উত্তমকুমার থেকে ঝট করে ভিলেনের তকমা এঁটে দেওয়া হয়েছে তাঁর গায়ে।
পঁচাত্তরের সেই পাঁচ গোলের ম্যাচ কে ভুলবে? পরদিনের কাগজে সুব্রত ভট্টাচার্য্যের নিন্দা না থাকলেও বহু মোহনবাগানি এখনও মনে করেন, পাঁচ গোলের সেই ম্যাচে, অন্তত একটা গোলের পেছনে ভুল ছিল সুব্রত ভট্টাচার্য্যের। এমনকি আত্মজীবনী 'গোল'-য়ে সুভাষ ভৌমিক বলেছেন, সেদিন বাবলু মস্তানি করছিল দেখে মাথা গরম হয়ে গেছিল। সেই পাঁচ গোলের ম্যাচে হাত নেড়ে ডাকটা আসলে বাবলুকেই।
পিকেও বারবার এই অতি সাহসী সুব্রত ভট্টাচার্য্যকে নিয়ে সতর্ক করেছেন তাঁর লেখায়।
বরাবরের স্পষ্ট কথা কিংবা দুর্দমনীয় রাগও অনেক সময় ভিলেন বানিয়েছে তাঁকে। সেটা ময়দানের 'গবা-কান্ডই' হোক, কিংবা ক্লাবের কোনো অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।
সাতাশির বড় ম্যাচে হেরে যাবার পর রণক্লান্ত সুব্রতকে দেখে মতি নন্দী লিখেছিলেন, "সুব্রতর চোখে শূন্যতা।" প্রকারান্তরে কি তিনি সুব্রতকে অবসর নেওয়ার ইঙ্গিত করেছিলেন? তবে সুব্রতর চোয়ালচাপা লড়াইয়ের কাছে তাঁর এই ইঙ্গিত পূর্ণতা পেল না। চিমা সমেত ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়েছেন লীগে, ডুরাণ্ডে, রোভার্সে। পরিচিতদের কাছে বলেছিলেন, 'যেদিন রিটায়ার করব, সেদিন মতিদাকে কিন্তু আবার লিখতে হবে।'
কলম ধরতে হয়েছিল মতি নন্দীকে, ১৯৯০, ৮ই সেপ্টেম্বর, বিএনআরের সাথে খেলা ছিল মোহনবাগানের। তাদের হারিয়ে, সেবার লিগ ঘরে তোলে সবুজ মেরুণ ব্রিগেড। সেই ম্যাচেই শেষবারের মত কলকাতা লীগে খেলতে নেমেছিলেন সুব্রত ভট্টাচার্য্য। সেদিন মতি নন্দী লিখেছিলেন, 'সুব্রতরা জীবনে কখনো অবসর নেবে না।' হ্যাঁ, আরেকটা কথা, অবসর নেওয়ার আগে, দু বার লাল হলুদের জালে বল জড়িয়েছেন। ডিফেন্ডার হিসেবে এই কৃতিত্ব আলাদা করে উল্লেখের দাবি রাখেই।
তবুও কি আমরা পুরো সুব্রতকে পেলাম? আমার মনে হয় পাইনি, এমনকি, তিনিও মনে করেন সেটাই। কারণ, দেশের হয়ে তাঁকে সেভাবে না পাওয়াটা তাঁর সাথে সাথে আমাদেরও আক্ষেপের বড় কারণ। ফুটবলপাগল বাঙালির স্বপ্নের জুটি সেন্টার ব্যাকে পাশাপাশি দুই ভট্টাচার্য্য — শ্যামনগরের বাবলু আর বেলঘরিয়ার মনা — অপূর্ণ থেকে গেল এটাও। মোহনবাগানকে তথা ভারতের ফুটবলকে উজাড় করে দিয়েছেন সুব্রত, কি খেলোয়াড় হিসেবে, কি কোচ হিসেবে, তবুও কি সব পাওয়া গেল? আজও সত্তরোর্ধ্ব সুব্রত ম্যাচের আগে নির্ভুলভাবে বলে দিতে পারেন, কি হতে পারে ম্যাচে, সেটা আমি আর একজনকেই করতে দেখেছি, ওঁরই প্রিয় বন্ধু, কোচিং এবং ফুটবলে বরাবরের টক্কর হতো যাঁর সাথে, সেই সুভাষ ভৌমিককে। অবশ্য হবে নাই বা কেন? পিকে-অমল দত্ত যুগের পরবর্তী যুগে দুই প্রধানের যুযুধান কোচিং যুদ্ধ তো এই দুজনকে ঘিরেই। তবুও তাঁদের লাইসেন্সিংয়ের অনীহা ভারতীয় ফুটবল সার্কিটের মূল পর্যায় থেকে অনেক দুরে সরিয়ে দিয়েছে দেখে খারাপ লাগে বৈকি।
গলি থেকে রাজপথ :
রেলের হয়ে সন্তোষ খেলা কোঁকড়াচুলের এক বাচ্চা ডিফেন্ডারকে দেখে প্রবাদপ্রতিম শৈলেন মান্নাকে মোহনবাগানে তাকে নেওয়ার পরামর্শ দেন আরেক প্রবাদপ্ৰতিম ফুটবলার চুনী গোস্বামী। কিছুদিন পরে গজু বসুকে সঙ্গে নিয়ে শ্যামনগরের গান্ধীনগর পাড়ায় বাবলুর খোঁজে হাজির হন চুনীবাবু। সুব্রতর মোহনবাগানে যাওয়া যখন প্রায় পাকা, তখনই তাল কাটল। পরের দিন শ্যামনগরের বাড়িতে হাজির লাল-হলুদের তিন মূর্তি - জীবন-পল্টু-অজয় শ্রীমানী। কিন্তু মায়ের বুদ্ধিতে সেদিনের মত বেঁচে যান বাবলু। তারপর কি করে ইস্টবেঙ্গলকে ঘোল খাইয়ে মোহনবাগান তাদের আইকনিক ষোলো নম্বরকে সই করাল, সেটা বলতে গেলে মহাভারত হয়ে যাবে।
তারপর কতবার কত অফার এসেছে, সুব্রত আর মোহনবাগান আস্তে আস্তে সমার্থক হয়ে গেছে। ইস্টবেঙ্গলের দেড়লাখের অফার ফিরিয়ে দিয়ে মোহনবাগানে আটত্রিশ হাজারে সই করা, কিংবা সতীর্থ ফুটবলার পাঁচ হাজার বেশি চাওয়ায় নিজের মাইনেরথেকে পাঁচ হাজার কেটে তাকে দিয়ে দিতে বলা -এগুলো সবই সুব্রত মানেই মোহনবাগান তত্ত্বে সীলমোহর দিয়ে দেয়।
অপয়া ক্যাপ্টেন তকমা পাবার পর মোহনবাগানকে ত্রিমুকুট দেওয়া অধিনায়ক সুব্রত ভট্টাচার্য্য। অমল দত্ত কোচ হয়ে জাতীয় দলে চলে গেলে প্লেয়ার কাম কোচ হয়ে দল সামলানোতেও সেই সুব্রত ভট্টাচার্য্য। আবার গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে দল থেকে বারবার বার করে দেবার পরেও ফিরে এসে নিজের জাত চেনানোর নাম সুব্রত ভট্টাচার্য্য। তাইতো বন্ধু সুভাষ ভৌমিক বাবলুকে নিয়ে বলেছেন, অসাধারণ বুদ্ধি ছিল বাবলুর। সঙ্গে ছিল ডিসিপ্লিন আর কনসিস্টেন্সি। চিমা ওর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটা গোল করলেও সেখানে সুব্রত সঠিক সাপোর্ট পেত না।
কোচ সুব্রত, টিডি সুব্রত :
এই অধম, সুব্রত ভট্টাচার্য্যকে খেলতে দেখেনি। তার কোচিংও খুব বেশি দেখার সুযোগ পায়নি। বরং তাঁকে বেশি দেখেছে একটু গ্রাম্ভারী এক পদে, যার নাম টেকনিক্যাল ডিরেক্টর, ওরফে টিডি। তবুও সেই পড়ন্ত বেলায় অনামী বাচ্চা ছেলে মণীশ ভার্গবকে বড় ম্যাচে নামিয়ে দিয়ে তার গোলে ২-০তে ইস্টবেঙ্গলকে হারানো উপভোগ করেছি দু চোখ ভরে।
খেলোয়াড়ী জীবনেই একবার কোচিং করাতে বাধ্য হলেও, পঁচানব্বইয়ের জুলাই থেকে ডিসেম্বর মোহনবাগানের কোচের পদে অভিষিক্ত হন মোহনবাগানের ঘরের ছেলে, সুব্রত ভট্টাচার্য্য। সেবার তেমন সাফল্য পাননি। তারপর আবার মোহনবাগানে ফেরা ১৯৯৯-এর নভেম্বরে। এইবারের সুব্রত যুগে শুরু হলো মোহনবাগানের সোনার সময়। একের পর এক ট্রফি এলো গঙ্গাপারের ক্লাবে। জাতীয় লিগ এল দুবার, আর একবার মাত্র একটুর জন্য হাতছাড়া হয়ে গেল। ফেড কাপ থেকে সুপার কাপ, ডুরাণ্ড-রোভার্স-শিল্ড অনেক কিছুই দিলেন তাঁর প্রিয় মোহনবাগানকে। এই সময়েই তাঁর হাত ধরে উত্থান ভারতীয় ফুটবল দলের শ্রেষ্ঠতম খেলোয়াড় সুনীল ছেত্রীর কিংবা ভারতের সর্বকালের সবচাইতে ধারাবাহিক বিদেশি জোসে রেমিরেজ ব্যারেটোর। শুধু এই দুজনই তো নয়, আরও বহু ফুটবলার বেরিয়েছে এই জহুরীর হাত থেকে। কোচ হিসেবে এত সফল হবার পর ফেডারেশনের লাইসেন্সিংয়ের চক্করে কোচিং জীবন শেষ হতে বসলেও পাওয়া যায় সেই জেদী ডিফেন্ডার সুব্রত ভট্টাচার্য্যকে। আধুনিক ফুটবলে লাইসেন্স জরুরী হলেও তাঁর কোচিং কেরিয়ারের সাফল্য দেখেও লাইসেন্স না করানোর সেই জেদকে কি একেবারে উপেক্ষা করা যায়? বোধহয় যায় না।
একই ক্লাবের হয়ে এক টানা সতেরো বছর পাঁচ মাস খেলা, হাজারের উপর ম্যাচ খেলে এক ডিফেন্ডারের ৫৮টা গোল এবং ৫৩টা ট্রফি - এই রেকর্ড ভারতীয় ফুটবলে অনন্য, তবে ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্য্যের পর কোচ সুব্রত ভট্টাচার্য্যও মোহনবাগানকে কিছু কম দেননি। দুটো ন্যাশনাল লীগ, একটা ফেড কাপ সহ তেরোটা ট্রফি দিয়েছেন মোহনবাগানকে। বরাবরের স্পষ্টবক্তা, বড় ম্যাচের পারফর্মার, চূড়ান্ত ফুটবল বোদ্ধা, মোহনবাগান-অন্ত প্রাণ এই মানুষটা খানিকটা অভিমানী হয়ে পড়েন যখন দেখেন ময়দান তাঁকে ভুল বুঝেছে। বিতর্কিত, বদমেজাজি, উদ্ধত, হামবাগের মতন নানান বিশেষণ তাঁর গায়ে সেঁটে দিয়েছে ময়দান। অথচ আবার সেই ময়দানই স্বীকার করেছে, মানুষটা একেবারে নারকেলের মতন, বাইরেটা যতই কাঠখোট্টা হোক, ভেতরটা ভীষণ নরম। তাই তো, যখনই কোনো ফুটবলারের সমস্যার কথা জানতে পারেন, এগিয়ে আসেন সবার আগে। টালিগঞ্জের প্রাসাদে থাকলেও ভোলেননি শ্যামনগরে ফুটো ছাদের ঘরে দারিদ্রকে ড্রিবল করে এগিয়ে যাওয়ার দিনগুলো। খেলোয়াড়ি জীবন কিংবা কোচিং জীবনে প্রচারের আলোয় থাকতে পছন্দ করলেও ব্যক্তিগত জীবনে প্রচারবিমুখ এই মানুষটার ফুটবল সত্ত্বাকে হয়ত চেষ্টা করে বোঝা সম্ভব হতে পারে, কিন্তু সুব্রত ভট্টাচার্য্য নামের মানুষটাকে চেনা তার থেকে অনেক অনেক অনেক বেশি কঠিন।
অনেক কিছুই বলা হলো না, আসলে সুব্রত ভট্টাচার্য্য একটা ব্র্যান্ড, একটা লড়াইয়ের নাম। তাঁকে সামান্য কিছু শব্দে বেঁধে রাখা সম্ভব নয়।
কুছ রীত জগৎ কি এইসি হ্যায়, হর এক সুবাহ কি শাম হুয়ি।
তু কৌন হ্যায়, তেরা নাম হ্যায় কেয়া, সীতা ভি ইয়াহাঁ বদনাম হুঁয়ি।
ফির কিঁউ সংসার কি বাতোঁসে ভিগ গ্যায়ে তেরে ন্যায়না?
কুছ তো লোগ কহেঙ্গে, লোগোঁ কা কাম হ্যায় কহেনা।
কলমে - সাত্যকি আদিত্য মিত্র
তথ্যঋণ :-
গুরু - প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় (সম্পাদনা - গৌতম ভট্টাচার্য্য, সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়)
গোল - সুভাষ ভৌমিক (সঙ্গে সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়)
কাউন্টার অ্যাটাক - সুব্রত ভট্টাচার্য্য
ষোলো আনা বাবলু - সুব্রত ভট্টাচার্য্য (সঙ্গে সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়)
মোহনবাগান-ই-লাইব্রেরি (যার সাহায্য না পেলে মোহনবাগানের অনেক ইতিহাস আমাদের মতন স্বর্ণযুগের পরে জন্মানো ছেলেমেয়েদের কাছে ওই স্বর্ণযুগের গল্পগুলো অনেকাংশেই অধরা থেকে যেত)
নবাব ভট্টাচার্য্য
শিবাজী চক্রবর্তী
Follow MBFT on Twitter, Facebook, Instagram, Youtube, Telegram, Whatsapp & Google News to stay updated with all the Mohun Bagan & Indian Football related News & Updates. Jai Hind Jai Bharat! Joy Mohun Bagan!