ইসকা নাম হ্যায় মোহনবাগান

Pic Courtesy : MBSG & ISL Media

জীবন টা সাপলুডোর মতো; আজকে চড়াই থাকলে কাল উৎরাই অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু জীবনের এই চড়াই উৎরাই মিলিয়ে দেয় কতকিছু, তার ইয়ত্তা নেই! মোহনবাগান কে যবে থেকে বুঝতে শিখেছি, যবে থেকে মোহনবাগান ' বাঁচার রসদ' হয়ে গেছে প্রকৃতপক্ষেই, তখন থেকেই শিখেছি, দেওয়ালে পিঠ ঠেকলেও ফিরে আসা যায়। 

২০০৯-১৪, মোহনবাগানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে সময় (সাফল্যের দিক থেকে); তারপরেই মোহনবাগানের নৌকার হাল ধরতে হাইতি থেকে এসেছিলেন এক জাদুকর। সোনালি চুলের সেই যাদুকর যখন মাঠের বামপ্রান্ত দিয়ে বিপক্ষ কে ফালাফালা করতেন, যখন ইনসাইড ডজে বিপক্ষকে ছিটকে দিয়ে তিনি শট নিতেন , যখন তার ফ্রীকিকে পরাস্ত হতো বিপক্ষ গোলরক্ষক, জীবনটা হঠাৎ করেই সাপলুডোতে সিঁড়ি টা খুঁজে পেয়ে ওপরে উঠে যেতো। মোহনবাগানীদের চোখের জল মুছিয়ে ৫ বছর পর এই হাইতিয়ান জাদুকরের হাত ধরে বাগানে এসেছিলো বসন্ত, এসেছিলো ৫ বছরে প্রথম ট্রফি, আর, যে সে ট্রফি না, আই লীগ। কিন্তু জাদুকরের যে আরো অনেক কিছু দেওয়া বাকি ছিলো; পরের মরসুমেই ফেড কাপ, সাথে এএফসি তে নজরকাড়া পারফর্মেন্স; হাইতিয়ান WIZARD সোনি নর্দে মোহনবাগান কে দিয়েছেন অনেককিছুই। 

কিন্তু, তার LEGACY, তার ICONIC হয়ে ওঠা? সেটা কিন্তু শুধু ট্রফি জিতিয়ে আসেনি। মোহনবাগানী হৃদয়ে সোনি অমরত্ব পেয়েছেন শিলিগুড়িতে, যখন তার ICONIC স্টেন গান শিলিগুড়িতে তাদের ডেরায় ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিলো ইষ্টবেঙ্গল-কে। সেদিন সাপলুডোর খেলায় আমি সিঁড়ি বেয়ে ৯০ এর ঘরে গিয়ে ১০০ তেও পৌঁছে গেছিলাম, সোনির মতোই ড্রিবল করে ডজ করেছিলাম সাপগুলো কে। কালের নিয়মে সোনি চলে গেছেন, আরো একটা আই লীগ এসেছে কিবু ভিকুনার হাত ধরে! কিন্তু তারপর? 

আবার জীবনের চাকা ঘুরতে শুরু হয়েছে, আবার চড়াই পেরিয়ে উৎরাই এসেছে, সাপ লুডো খেলতে গিয়ে বারবার জীবন সাপের মুখে পড়ে নীচে নেমে এসেছে! 

আচ্ছা, এমন কখনো হয়েছে, যখন আপনার জীবন থেকে আপনার ভালোবাসাই ৩ বছরের জন্য হারিয়ে গেছে? কখনো এমন হয়েছে, যখন আপনার ভালোবাসার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন অনেক কষ্টে? কখনোও এমন হয়েছে, যে চিৎকার করে বলতে চেয়েছেন 'ভালোবাসি', কিন্তু পিছুটানে বারবার আটকে গেছেন? 

ঠিক এটাই হয়েছিলো আমার সাথেও ২০২০-২৩ অবধি, যখন মোহনবাগান থেকেও জীবনে মোহনবাগানের অস্তিত্ব'ও ছিলোনা। ২০০৯-১৪'র থেকেও বোধহয় অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়; কিন্তু, সাপলুডোর নিয়ম যে সবসময় এক। জীবন যতটা উৎরাই দেখবে, সেই জীবন'ই ততটা চড়াই'ও দেখবে। আমিই বা ব্যতিক্রম কেনো? ২০২৩ জীবনে মোহনবাগান কে তো ফেরলোই, সাথে আরেক রুপকথার বাঁশিওয়ালা কে আমার জীবনে এনে দিলো। এবারে অস্ট্রেলিয়া থেকে! কখনো ডুরান্ড ডার্বির বদলা সেখানেই ফাইনালে বুক চাপড়ে উরু বাজিয়ে নেওয়া হোক, কখনো দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মোহনবাগানে আরেক বসন্তদূত হয়ে এসে নতুন প্রান সঞ্চার করে আবার লীগের দাবিদার বানানো হোক! যখনই মোহনবাগান থাকে গোলের সন্ধানে, তখন কোটি কোটি মোহনবাগান সমর্থক অজান্তেই বিড়বিড় করে 'দিমি দিমি'; আর দিমি কাউকেই নিরাশ করেন না। হাবাসের মোহনবাগানে দিমিত্রি হয়ে গেছেন পেপ গার্দিওলা'র লিও মেসি। দিমি যখন দূরপাল্লার শট নেন, যখন বক্সে একটা বল ভাসান বা কখনোও ১০ জনের মোহনবাগানের মসীহা হয়ে ছুটে আসেন ইষ্টবেঙ্গল গোলের দিকে, আমার ঘুঁটি টা আবার সাপলুডো'র সিঁড়ি বেয়ে উঠে যায় ৯০ এর ঘরে।

আর শুরুতেই বলেছিলাম, জীবন খুব অদ্ভুত, এই চড়াই উৎরাই-এর গল্প গুলো মিলিয়ে দেয় কতো কিছু।

ঠিক যেভাবে মিলিয়ে দিয়েছে হাইতির জাদুকরের সাথে অস্ট্রেলিয়ার রূপকথার বাঁশিওয়ালা কেও! 

সোনির স্টেন গানের গুলি শিলিগুড়িতে রক্তপাত ঘটিয়েছিলো অজস্র লাল হলুদ হৃদয়ে। আজো লেসলি ক্লডিয়াস সরনি দিয়ে গেলে অতৃপ্ত আত্মারা কেঁদে ওঠে, "বোরহা, আমার সোনির পা দুটো চাই"; কাল রাত থেকে সোনির সাথে মিশে গেলেন দিমি'ও; সোনির স্টেন গান মোহনবাগান গ্যালারি তে ফিরলো, ৪৫ মিনিটেই মাঠ ছাড়া করালো রিয়া গাঙ্গুলি, শুভেচ্ছা সামন্ত-দের। ডার্বির আগে থেকেই কিছুজন প্রলাপ বকছিলেন, তাদের দিমির পা টা চাই; আজ থেকে তাদের অতৃপ্ত আত্মাও ঘুরে বেড়াবে ইষ্টবেঙ্গল ক্লাবে।

আর আমার মোহনবাগান? মোহনবাগান বরাবর অওকাদ দেখিয়ে দিয়ে এসেছে বিপক্ষ কে। মোহনবাগান কারুর পা ভাঙ্গতে মাঠে নামে না, মোহনবাগান নামে জিততে। আর এখানে, জিততে জিততেই মিশে যায় দেবজিতের সাথে বিশাল কাইথ; কোনো কাটসুমির ওয়ার্কলোড কে মনে করায় সাহালের কমিটমেন্ট; দিপান্ডা ডিকার মতোই ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দেন জেসন কামিংস; শেখ সাহিলের মতোই সবার অজান্তেই দলের স্তম্ভ হয়ে ওঠেন এক তরুন, অভিষেক সূর্যবংশী; ফ্র্যান গঞ্জালেসের মতোই দলকে চালনা করেন এক জনি কাউকো; আর?

সোনির স্টেন গান হাতে তুলে নেন দিমিত্রি পেত্রাতোস, সদর্পে জানান 'ইসকা হি নাম হ্যায় মোহনবাগান'

এখানে ঘৃনা নয়, ভালোবাসার ই জয় হয়; কারন 'ISHQ কা নাম হ্যায় মোহনবাগান'

Pic Courtesy : ISL Media

Follow MBFT on TwitterFacebookInstagramYoutube, TelegramWhatsapp & Google News to stay updated with all the Mohun Bagan News & Updates. Joy Mohun Bagan !

Previous Post Next Post