ভিসা জটিলতায় ভারতের ভুবনেশ্বরে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের বিপক্ষে বসুন্ধরা কিংসের ২৪ অক্টোবর এএফসি কাপের ম্যাচে অংশ নেওয়া অনিশ্চয়তার মুখে। আজ শনিবারও দলের কারো ভিসা মিলেনি। তাই বাধ্য হয়েই ভিসা নিয়ে সৃষ্ঠ জটিলতার বিষয়টি সবিস্তারে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন্সকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে বসুন্ধরা কিংস কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে ভিসা সমস্যা না কাটলে ম্যাচে খেলাটাও যে কঠিন হয়ে যাবে, সেটাও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ক্লাবটির সভাপতি ইমরুল হাসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে লেখা হয়-
"এই চিঠির মাধ্যমে জানানো যাচ্ছে যে, বসুন্ধরা কিংস নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে মোহনবাগানের সঙ্গে এএফসি কাপের ম্যাচটি খেলতে ম্যাচ ভেন্যুতে যেতে পারবে না। এএফসি কাপের নিয়ম বাইলজের ৩.৭ ধারায় বলা আছে, অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে অংশগ্রহণকারী দলকে ম্যাচের অন্তত দু'দিন আগে ম্যাচ ভেন্যুতে পৌঁছুতে হবে। বসুন্ধরা কিংস ২৮ আগস্ট অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের (এআইএফএফ ) কাছে বহরের তালিকা পাঠিয়েছিল। এআইএফএফ উত্তরে একটা ইনভাইটেশন পাঠিয়েছে, যেখানে সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসার কথা উল্লেখ করেছে। যা দিয়ে আমরা ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের ভিসার আবেদন করতে পারবো। তবে আমাদের প্রয়োজন ছিল এমন একটা আমন্ত্রণপত্র যেখানে ডাবল এন্ট্রি ভিসার কথা উল্লেখ থাকবে। কারণ ভারতে আমাদের দুটি অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে হবে। গ্রুপের অপর দল মালদ্বীপের মাজিয়া এআইএফএফ-এর কাছে ডাবল এন্ট্রির বিষয়টি উল্লেখ করে আমন্ত্রণ পত্র চেয়ে তাদের প্রথম ম্যাচের আগে নির্ধারিত সময়েই পেয়ে যায়। ২৯ আগস্ট বসুন্ধরা কিংস ডাবল এন্ট্রি ভিসার বিষয়টি উল্লেখ করে এআইএফএফ কে চিঠি দিতে অনুরোধ করে। তার কথা জবাব না পাওয়ায় ২ সেপ্টেম্বর ও ১২ সেপ্টেম্বর দুই প্রস্থে তাগাদা পত্র দেয়। তবে দু'বারই এআইএফএ-এর কাছ থেকে কোন উত্তর না আসায় ১৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ভারতীয় হাইকমিশনারের কাছে চিঠি দেয় যাতে বিশেষ অ্যাপয়েন্টমেন্টের মাধ্যমে ২১ সেপ্টেম্বর আমাদের ভিসার আবেদনগুলো জমা নেয়। এর মধ্যে ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের কাছে এআইএফএফ বসুন্ধরা কিংসের তালিকাভুক্তদের ডাবল এন্ট্রি ভিসা প্রদানের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয়। সকল তথ্য পাওয়ার পর ২০ সেপ্টেম্বর অনলাইনের মাধ্যমে কিংসের সকলে ভিসার জন্য আবেদন করেন। তবে বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনের নিয়ম হচ্ছে প্রত্যেক আবেদনকারীকে সশরীরে ভিসা সেন্টারে উপস্থিত হয়ে সকল কাগজপত্র ও আঙুলের ছাপ দিতে হবে। অনলাইনে আবেদন করার পর আমরা আবেদনপত্র জমা দেওয়ার তারিখ পাই ১ নভেম্বর, যা ছিল বাস্তবতা বিবর্জিত। আগেই জানিয়েছি, যে ২১ সেপ্টেম্বর বাফুফের সাধারণ সম্পাদক বিশেষ ব্যবস্থায় আবেদনপত্র জমা নেওয়ার জন্য যে চিঠি দিয়েছিল তার কোন জবাব তিনি পাননি। ৫ অক্টোবর হাইকমিশনের কাছে বাফুফে দ্রুততার সঙ্গে বিশেষ ব্যবস্থায় আবেদনপত্র জমা নেওয়ার জন্য একই চিঠি পাঠায়। তবে এবারও কোন জবাব দেওয়া হয়নি কিংবা কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ৭ অক্টোবর বিষয়গুলো অবহিত করতে বসুন্ধরা কিংস এআইএফএফ-এর কাছে চিঠি পাঠালে জবাবে সবার আবেদন পত্রগুলো তাদের কাছে পাঠাতে বলে এবং কিংস সেগুলো পাঠিয়ে দেয় এবং এআইএফএফ সব ডকুমেন্টস পাওয়ার কথা স্বীকার করে। তবে এরপর ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত এআইএফএ ও ভারতীয় হাইকমিশন থেকে আমাদের সঙ্গে কোন মাধ্যমেই যোগাযোগ করা হয়নি। তাই ১৮ অক্টোবর আমরা আবার এআইএফএফ কে লিখি। তবে হঠাৎ করে সেদিনই হাইকমিশন থেকে আমাদের কাছে ফোন আসে এবং বলা হয় কাগজপত্র ও আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে যেতে ভিসা সেন্টারে। আমরা সেভাবেই সবাই গিয়ে তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী আবেদন করি এবং বিষয়টি আবার এআইএফএফকে জানাই। তবে পাসপোর্ট গ্রহণ ফরমে তারা ৯ নভেম্বর উল্লেখ করে, যেটা ছিল অসামঞ্জস্যপূর্ণ। আমরা সবগুলো স্লিপ এআইএফএফকে পাঠাই এবং জানাই মাত্র দেড় কর্মদিবস বাকি আছে ভারতে আমাদের সফর শুরুর আগে, তাই তারা যাতে বিষয়টি সেভাবেই বিবেচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। এরপর ১৮ থেকে ২০ অক্টোবর প্রতিদান আমরা তাদের তাগাদা দিয়েছি যাতে ভিসা নিয়ে সৃষ্ঠ জটিলতা দূর করা হয়। আমরা এই ইস্যুতে এআইএফএ ও ভারতীয় হাইকমিশনের মধ্যে যোগাযোগের ঘাটতি দেখতে পেয়েছি। তাই এএফসি কম্পিটিশন্স অপারেশন্স ম্যানুয়ালের ২০২৩ সংস্করণের ৩৬.২ ও ৩৬.২.১ ধারা অনুযায়ী বিষয়টি এএফসির ডিসিপ্লিনারি কমিটি ও এথিকস কমিটির অবশ্যই দেখা উচিত। আমরা এর মধ্যেই ২২ অক্টোবর সকাল সোয়া দশটার বিমানের টিকিট কেটে ফেলেছি এবং বিষয়টি সবাইকে সময়মতো জানানো হয়েছে। তাছাড়া আমাদের আবাসনও চূড়ান্ত করা হয়েছে। আর এসব কিছুই অগ্রিম করা হয়েছে। এ অবস্থায় এ সব পরিবর্তন করা যেমন সম্ভব নয়, তেমনই নতুন করে এতগুলো টিকিট একসঙ্গে কাটাও কঠিন। তাই ২১ অক্টোবরের মধ্যে যদি আমরা ভিসা না পাই, তাহলে আমাদের পক্ষে ভারতে উড়ে গিয়ে মোহনবাগানের সঙ্গে ম্যাচটা খেলা সম্ভব হবে না।"
গতকাল শুক্রবার ও আজ শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। তারপরও বিশেষ বিবেচনায় ছুটির দিনগুলোতেও অনেক সময় ভিসা দিতে দেখা গেছে। তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কিংসের কেউই ভিসা পায়নি বলে জানিয়েছেন ক্লাবটির এক কর্মকর্তা। এ অবস্থায় ভিসা না পেলে বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে যেমন পড়তে হবে ক্লাবটিকে, একই সঙ্গে ভুবনেশ্বরে গিয়ে খেলাটাই অসম্ভব হয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে ম্যাচ ভেন্যুতে যথেষ্ট প্রস্তুতির সুযোগও যে থাকবে না তাদের জন্য।
উল্লেখ্য, এএফসি কাপের গ্রুপসেরা হতে ২৪ অক্টোবরের ম্যাচটি কিংসের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এই ম্যাচ থেকে পয়েন্ট পেলে তাদের সেরা হওয়ার সুযোগ বেড়ে যাবে। তবে হেরে গেলে পথটা কঠিন হয়ে পড়বে। মাঠের সেই সমীকরণ মেলানোর আগে অবশ্য কিংস কর্তাদের কপালে চিন্তার রেখা এই ভিসা জটিলতা নিয়ে।