সন্তোষে নামছে বাংলা। সঞ্জয় সেনের দলের খুঁটিনাটি। কেমন হতে পারে ফলাফল?



রঞ্জি ট্রফি শুরু হলেই যেমন মুম্বাইকে ট্রফি জয়ের অন্যতম দাবিদার বলে ধরে নেওয়া হয়, ঠিক তেমনই সন্তোষ ট্রফি জয়ের অন্যতম দাবিদার ধরা হয় বাংলাকে। ১৯৪১ সালে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্ট  রাজ্যভিত্তিক ফুটবল টুর্নামেন্ট হিসেবে জাতীয় স্তরের সর্বোচ্চ টুর্নামেন্ট। বাংলা এই প্রতিযোগিতায় ৩২ বার বিজয়ী হয়েছে এবং ফাইনালে উঠেছে মোট ৪৬ বার। বাংলার চেয়ে সফল দল এখনো পর্যন্ত এই টুর্নামেন্টে না থাকলেও বিগত কয়েক বছরে বাংলা সন্তোষ ট্রফি জিততে ব্যর্থ হয়েছে। শেষবার ২০১৬-১৭ মরশুমে গোয়ায় অনুষ্ঠিত সন্তোষ ট্রফি জয়ের পর আর মাত্র দুবার টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠলেও জিততে ব্যর্থ হয়েছে বাংলা দল। এবার সেই কাঙ্খিত ট্রফি জয়ের লক্ষ্যেই দল সাজিয়েছেন বঙ্গ প্রশিক্ষক সঞ্জয় সেন।

খেলোয়াড় হিসেবে দীর্ঘকাল সুনামের সঙ্গে খেলার পর কোচিংয়ে এসে সঞ্জয় সেন মহামেডানকে ডুরান্ড এবং শিল্ড চ্যাম্পিয়ন করেন, তারপর মোহনবাগানে এসে সবুজ মেরুন শিবিরকে দেন তাদের বহু কাঙ্খিত আইলীগ ট্রফি। তাঁর কোচিংয়ে ফেডারেশন কাপও জেতে মোহনবাগান।

এহেন বায়োডাটা যে কোচের, বিশেষত খেলোয়াড় হিসেবেও যাঁর সন্তোষে খেলার অভিজ্ঞতা আছে, তাঁর কোচিংয়ে এবার বঙ্গব্রিগেড ট্রফি জয়ের স্বপ্ন দেখতেই পারে।


ছেচল্লিশজন নিয়ে শুরু হওয়া ট্রায়াল পিরিয়ডে খেলোয়াড়দের মধ্যে থেকে আজ চূড়ান্ত বাইশ জনের নাম ঘোষিত হলো সন্তোষের বাংলা দলের জন্য। আগামী ১৬, ১৮ এবং ২০শে নভেম্বর কল্যানী স্টেডিয়ামে তারা মুখোমুখি হবে ঝাড়খণ্ড, বিহার ও উত্তর প্রদেশের।

এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এই বাংলা দলে কে কে সুযোগ পেলেন - 

১. শঙ্কর রায় 

২. সৌরভ সামন্ত 

৩. আদিত্য পাত্র 

৪. রুহুল কুদ্দুস পুরকাইত 

৫. বিক্রম প্রধান 

৬. অয়ন মন্ডল 

৭. জুয়েল আমেদ মজুমদার 

৮. রবিলাল মান্ডি 

৯. মদন মান্ডি 

১০. চাকু মান্ডি 

১১. সুপ্রিয় পন্ডিত 

১২. আবু সুফিয়ান 

১৩. ইস্রাফিল দেওয়ান 

১৪. অমরনাথ বাস্কে 

১৫. আদিত্য থাপা 

১৬. মনোতোষ মাঝি 

১৭. সুপ্রদীপ হাজরা 

১৮. অরিত্র ঘোষ 

১৯. বাসুদেব মান্ডি 

২০. তারক হেম্ব্রম 

২১. নরহরি শ্রেষ্ঠা 

২২. রবি হাঁসদা


হয়ত অভিজ্ঞতার নিরিখেই শঙ্কর রায় জায়গা পেলেন, বড় দলের দুর্গের শেষ প্রহরী হিসেবে বেশ কিছুদিন খেলার অভিজ্ঞতা কোচ কাজে লাগাতে চেয়েছেন। ডায়মন্ড হারবারের সুস্নাত মালিকও অনায়াসেই আসতে পারতেন বাইশ জনের স্কোয়াডে।

বিশ্বজিৎ হেমব্রম এবং অঙ্কন ভট্টাচার্য্য রেলে চাকরি করার ফলে রেল ওদের NOC দেয়নি, ফলে দুজনকে বাদ দিয়েই দল সাজাতে হয়েছে।

ম্যান ম্যানেজমেন্টের জন্য সঞ্জয় সেন যথেষ্ট প্রসিদ্ধ এবং আশা করি অল্প কদিনেই দলকে এক সুতোয় গেঁথে ফেলেছেন তিনি। যোগ্য প্লেয়ারদের দলে নিয়েছেন তিনি, এর বাইরেও কলকাতা লিগে অনেকেই ভালো খেললেও, তারা হয়ত সুযোগ পাননি কোচের প্লেয়িং স্টাইলে খাপ না খাবার জন্য। আবার সাহিল হরিজন, সুজল মুন্ডার মতন কেউ কেউ বাদ পড়েছেন চোটের কারণে।


এই বাইশ জনের প্রত্যেকেই যথেষ্ট যোগ্য এবং অনেকেই একাধিক পজিশনে খেলার ক্ষমতা রাখেন। সঞ্জয় সেন দলকে মূলত ৪-৪-১-১  বা ৪-১-৩-১ ছকে খেলাতে পছন্দ করেন। যদি ৪-৪-১-১ ধরে এগোনো যায়, সেক্ষেত্রে গোলে সম্ভবত শঙ্কর রায় শুরু করবেন। যদিও ফর্মের বিচারে আদিত্য পাত্র এগিয়ে, তবে এই দলের মধ্যে শঙ্করই একমাত্র খেলোয়াড়, যিনি শেষবার সন্তোষজয়ী দলে ছিলেন। সাইডব্যাক হিসেবে রবিলাল খেলতে পারেন বাম পাশে আর রুহুল ডানদিকে। রুহুল যদিও ভীষণ ভার্সেটাইল এবং তিনি সেন্টার ব্যাক এবং দুপাশের সাইডব্যাকেই খেলতে পারেন। দুজন সেন্টার ব্যাকের সামনে একজন ডিফেন্সিভ স্ক্রিন হিসেবে থাকবে এবং আরেকজন মিডফিল্ডার ফ্রি মুভ করবেন। দুজন সেন্টার ব্যাক হিসেবে একজন অবশ্যই মদন মান্ডি, অন্যজন হয়ত থাকবেন চাকু মান্ডি। রুহুলের আসল পজিশন কিন্তু স্টপারই। কাজেই তিনিও খেলতে পারেন মাঝখানে। ডিফেন্সিভ স্ক্রিন হিসেবে সবথেকে ভালো চয়েস হবে আদিত্য থাপা। আদিত্য খুব ঠাণ্ডা মাথার ছেলে, খুব কম ফাউল করে কি করে বলটা কেড়ে নিয়ে বেরিয়ে যেতে হয়, খুব ভালো করেই জানেন। সেই সঙ্গে ওর ওয়ার্কলোড নেবার ক্ষমতাও প্রশংসনীয়। ওর একটু সামনে থাকবে তারক হেমব্রম। তারকের বল কন্ট্রোল ভীষণ ভালো এবং ভীষণ কনফিডেন্সের সাথে ফাউল আর্ন করতে পারে। নবাব ভট্টাচার্যের আদরের ছোটেলাল আবার ফাইনাল থার্ডে বল বাড়াতে পারেন ভালোই, সেইসঙ্গে গোলটাও চেনেন। তারককে মাঝমাঠে ফ্রি মুভ করতে দিলে গোলের সুযোগ অনেক বাড়বে। অ্যাটাকিং মিডিও পজিশনের জন্য এই দলের বাজি অবশ্যই অরিত্র ঘোষ। ৪-৪-১-১ ফর্মেশনে স্ট্রাইকারের একটু পেছন থেকে শুরু করুন অরিত্র। অ্যাটাকিং মিডিও এবং স্ট্রাইকার দুই পজিশনেই খেলতে পারলেও মাঝমাঠে ক্রিয়েটিভিটি বাড়ানোর জন্য অরিত্র একটু পেছন থেকেই শুরু করুন, ওর পজিশনটা ঠিকমতো বলতে গেলে উইথড্রয়াল ফরোয়ার্ড বলা উচিত। এবছর শুরুর দিকে ফর্ম একটু পড়তির দিকে থাকলেও ধীরে ধীরে ফর্ম খুঁজে পেয়েছেন জাঙ্গিপাড়ার অরিত্র। যদি ৪-৪-১-১ ফরমেশনে খেলা হয়, তাহলে ঐ পজিশনে খেলার জন্য অরিত্রকে সবথেকে বেশি টক্কর দেবেন বাসুদেব মান্ডি। বাসু ফর্মে থাকা মানেই বিপক্ষ ডিফেন্সের ঘুম উড়ে যাওয়া। হুগলীর তারক এবং বাসুর জুটি তাদের জেলারই আরেক প্রতিভাবান ফুটবলার দীপেশ মুর্মুকে সঙ্গী করে এগারো বছর পর জিতেছিলেন ন্যাশনাল গেমস। যদিও বাসু নাম্বার টেনের থেকেও ডানদিক ঘেঁষে খেলতে, উইং দিয়ে খেলতে বেশি পছন্দ করেন। তবে রাইট উইং হাফ হিসেবে ফর্মের বিচারে অটোমেটিক চয়েস আবু সুফিয়ান। সুরুচির হয়ে এবার খুব ভালো ফর্মে ছিলেন, গোলটা চেনেন ভালো মতো। লেফট উইং হাফ হিসেবে ইস্রাফিল দেওয়ান খেলা উচিত। উত্তরপাড়া নেতাজী ব্রিগেডের প্রোডাক্ট এই ছেলেটি মহামেডান স্পোর্টিংয়ের হয়ে দারুন খেলেছেন, গোল চেনেন ভীষণ ভালো। আর স্ট্রাইকার হিসেবে অবশ্যই থাকবেন বহু যুদ্ধের ঘোড়া নরহরি শ্রেষ্ঠা। উত্তরবঙ্গের নরহরি গত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত পারফর্ম করে আসছেন, তেকাঠি চেনেন ভীষণ ভালো, দূরপাল্লার জোরালো শটেও গোল করতে পারেন।


যদি দলটা ৪-১-৪-১ ফর্মেশনে খেলে, তাতেও বিশেষ কিছুই বদলাবার নেই। মিডফিল্ডে আদিত্যর সামনে তারক-বাসু জুটি শুরু করবে না তারক-অরিত্র জুটি শুরু করবে, সেটাই দেখার। অরিত্র এবং বাসু দুজন ইউটিলিটি প্লে মেকারকে একসাথে খেলানোর ঝুঁকি কোচ হয়ত নেবেন না। রুহুল সেন্টার ব্যাকে খেললে ডানদিকে আসতে পারেন বিক্রম। সেন্টার ব্যাকে সাবস্টিটিউট হিসেবে জুয়েল কিংবা অয়ন আসতেই পারেন। মাঝমাঠে এবং উইংয়ে কোচের কাছে প্রচুর অপশন, অনেক ভার্সেটাইল খেলোয়াড় রয়েছেন। স্ট্রাইকার হিসেবে নরহরির বদলি হিসেবে রবি হাঁসদা আসতে পারেন দ্বিতীয়ার্ধে।


তবে সম্প্রতি ইন্টার কাশীর সাথে প্রস্তুতি ম্যাচে সঞ্জয় সেন নতুন দলকে খেলিয়ে অভিজ্ঞদের বেঞ্চে রেখেছিলেন। তার দল ৪-১-২-৩ ছকে খেলেছে। গোলে শুরু করেছিলেন সৌরভ সামন্ত, ব্যাক ফোর বিক্রম, অয়ন, জুয়েল, রবিলাল। ডিফেন্সিভ স্ক্রিন চাকু। দুই মিডফিল্ডার সুপ্রদীপ এবং রবি। সামনে ত্রিমূর্তি আবু মনোতোষ এবং ইসরাফিল। এক্ষেত্রে কোচ চাকু মান্ডিকে ডিফেন্সিভ ব্লকার হিসেবে দেখে নিয়েছেন, হয়ত মূল প্রতিযোগিতায় রুহুল শুরু করতে পারেন সেন্টার ব্যাকে।


দল বেশ ভালো হয়েছে, ব্যালেন্সড হয়েছে, হয়ত আরো অনেকে আসতে পারত, কিন্তু জায়গা মাত্র ২২ জনের। প্রত্যেকেই যোগ্য এবং প্রতিভাবান খেলোয়াড় হলেও MBFT কয়েকজনকে গেমচেঞ্জার এবং ডার্ক হর্স হিসেবে নির্বাচিত করেছে।

MBFTর নজরে যে পাঁচজন গেমচেঞ্জার হতে পারেন, তারা হলেন ডিফেন্সে মদন মান্ডি, ডিফেন্সিভ মিডিও হিসেবে আদিত্য থাপা, মাঝমাঠে তারক হেমব্রম, বাসুদেব মান্ডি এবং অবশ্যই স্ট্রাইকার নরহরি শ্রেষ্ঠা। MBFTর নজরে এই দলের কালো ঘোড়া হতে পারেন অরিত্র ঘোষ।

অবশেষে আশা রাখাই যায় কোচের গেমপ্ল্যান এবং প্লেয়ারদের গেমপ্লের সঠিক মেলবন্ধন ঘটলে ৩৩তম সন্তোষ জয়ে খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না। গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলো ঘরের মাঠ কল্যাণীতে হওয়ায় একটু হলেও সুবিধা পাবে বঙ্গ ব্রিগেড।

Follow MBFT on TwitterFacebookInstagramYoutube, TelegramWhatsapp & Google News to stay updated with all the Mohun Bagan & Indian Football related News & Updates. Jai Hind Jai Bharat! Joy Mohun Bagan!

Previous Post Next Post