“তিন গ্যালারির একটাই স্বর, জাস্টিস ফর আরজি কর” । বাংলার ফুটবল আজ ঐক্যবদ্ধ ।

 “তিন গ্যালারির একটাই স্বর, জাস্টিস ফর আরজি কর”


রবি ঠাকুরের সেই গানের লাইনটা বারবার খুব প্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়িয়েছে- "শাসনে যতই ঘেরো, আছে বল দুর্বলেরও।" কিন্তু আজ একটা মস্ত বড় ভুল হয়ে গেল। ভুলটা হল বাংলার আপামর ফুটবলপ্রেমীকে "দুর্বল" ভেবেই। ১৯২১ থেকে চলে আসছে এই দুই ফুটবল দলের লড়াই। দুদলের লড়াই, রেষারেষির ইতিহাস, ফুটবল বিশ্বের রাইভালরির বিচারেই আসবে প্রথম দিকে। তার ওপর এক খেলোয়াড়কে নিয়ে টানাপোড়েনের ফলে এখনও দুই দলের মধ্যে এবং সমর্থকদের মধ্যে একটা উত্তপ্ত পরিবেশ। আর এত কিছুর মাঝেই ঘটে গেল আর জি করের সেই নৃশংস ঘটনা। বিচার চেয়ে পথে নামলেন মেয়েরা। একের পর এক প্রতিবাদ আছড়ে পড়তে থাকল গোটা বাংলা জুড়ে। অপর দিকে পাল্লা দিয়ে চলতে থাকল এই নৃশংস ঘটনাস্থলের পাশের ঘরের দেওয়াল ভাঙা, বহিরাগতদের হসপিটাল ভাঙচুর ইত্যাদি। বিভিন্ন কর্মকান্ড মেনে নিতে পারলেন না সাধারণ মানুষ। এমন আবহে মোহন-ইস্ট সমর্থকরা একত্রিত হলেন। বিভিন্ন মোহনবাগান আর ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা ঠিক করলেন এই ডার্বি হোক তিলোত্তমার জন্য। এই ডার্বি হোক দেশের প্রতিটা কোণে কোণে প্রতিটা নির্যাতিত নারীর। এই ডার্বি হোক এই ঘটনার সঠিক বিচার চেয়ে। মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গলের ফ্যান্স ক্লাব গুলো পরিকল্পনা করল টিফোর। চলতে থাকল কাজ।

ডুরান্ড কাপে টিকিট নিয়ে একটা অরাজগতা চলেই। কিন্ত তার মধ্যেও কম করে ধরলেও পঞ্চাশ হাজার মানুষের একসঙ্গে "জাস্টিস ফর আর জি কর" কথাটা হয়তো মেনে নেওয়া সম্ভব হত না কারোর কারোর পক্ষে। ঘোষণা করা হল ডার্বি বাতিল। দুই প্রধানের বাকি ম্যাচ সরে গেল ভিন রাজ্যে।


আর এখানেই যেন সিলেবাসের বাইরে থেকে আসা বিষয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না অনেকেই। একত্রিত হল মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গল। যোগ দিল মহমেডান স্পোর্টিং। নাহ্, কর্মকর্তারা নয়, যোগ দিলেন হাজার হাজার সমর্থক। ফ্যান্স ক্লাব গুলো সোসাল মিডিয়াতে পোস্ট করতেই তাদের জানানো হল জমায়েত না করতে। অনেকটা যেন ঘৃতাহুতির মত কাজ করে গেল এসব ঘটনা।

যে নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে ম্যাচ হল না, এদিন সকাল থেকে অসংখ্য পুলিশ মোতায়েন করা হল সল্টলেক স্টেডিয়ামের ভিআইপি গেট, দুই নম্বর গেট, তিন নম্বর আর তিন-এ গেট, কাদাপাড়া এলাকায়। ভিড় বাড়তে শুরু করল। সবুজ মেরুন লাল হলুদ এক হল। শান্তিপূর্ণভাবে স্লোগান চলতে শুরু করলে পুলিশের পক্ষ থেকে আক্রমণ করা হল। অকারণে প্রিজনভ্যানে তোলা বল বহু সমর্থককে। কেন? উত্তর নেই। বিধাননগর পুলিশ জানিয়েছিলেন কয়েকজন গন্ডগোল সৃষ্টি করতে চাইছে। কিন্ত সেরকম কিছু হয়নি। তবু হাত উঠল আমার আপনার মত সমর্থকদের গায়ে। যদিও পরে তাদের প্রিজনভ্যান থেকে নামিয়ে দিতে বাধ্য হয়।


বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নেমে আসে। ঘামের সঙ্গে মিশে যায় বৃষ্টির ফোঁটা। প্রতিবাদের ভাষা তীব্রতর হয়। যুবভারতীর ভেতরে যা কোনোদিন হয়নি, যুবভারতীর বাইরে সেটারই দৃঢ়তা বাড়তে থাকল। এত সিলেবাসের বাইরে থেকেই আসা বিষয়।

মোহনবাগানের আল্ট্রাস টিশার্ট পরিহিত একটি ছেলের কাঁধে ইস্টবেঙ্গলের লাল হলুদে একটি ছেলে। প্রিজনভ্যানের জাল দিয়ে পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে সবুজ মেরুন আর লাল হলুদ। কাধে কাধ মিলিয়ে সবুজ মেরুন, লাল হলুদ, সাদা কালো। এসব দৃশ্য কবে দেখেছে পশ্চিমবঙ্গ? কেউ ভাবতেও পারেনি কোনোদিন।


মিছিলের একটা অংশে ফোর ফ্রন্টে থাকলেন "বোস"- মোহনবাগানের অধিনায়ক শুভাশীষ বোস সস্ত্রীক। "সবাইকে একসাথে লড়তে হবে"- জোরালো কন্ঠে বললেন তিনি—নিজের জন্মদিনে মোহনবাগান ছাপিয়ে হয়ে উঠলেন ময়দানের ক্যাপ্টেন। বাঙালী, এরপর থেকে একটু ঠিক কাদের কাদের ক্যাপ্টেন বলা যায় একটু ভেবে নেবেন বরং।


বাঙালীদের নিয়ে এমনি অনেক নিন্দে আছে। কাঁকড়ার জাত, প্রতিবাদমনস্কতা মরে যাওয়া ইত্যাদি। তার ঐতিহাসিক কারণও আছে। সেখানে দাঁড়িয়ে এমন দৃশ্য, এমন ঘটনা বিস্ময় জাগায়।

আমরা যেন মনে রাখি, মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গল মহমেডান ক্লাব মানে কর্মকর্তারা কিন্ত সবাই চুপ। লড়াইটা লড়ছেন সমর্থকেরা। মান আর হুশ নিয়ে, বৃষ্টিতে ভিজে তিলোত্তমার বিচার চাইল তিলোত্তমা। যেন বলে গেল এই পৃথিবীতে সবকিছুই বিক্রী হয়, শুধু ফুটবল সমর্থক বাদে। 


আঠারোই আগস্ট ২০২৪ হয়ে থাকল আইকনিক, ঠিক মোহনবাগান অধিনায়কের পেছনে লাল হলুদ পতাকাটা ওড়ার মতোই।

লড়াই জারি থাকছে। জাস্টিস ফর আর জি কর।






Follow MBFT on TwitterFacebookInstagramYoutube, TelegramWhatsapp & Google News to stay updated with all the Mohun Bagan & Indian Football related News & Updates. Jai Hind Jai Bharat! Long Live Bengal Football! 

Previous Post Next Post